শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫

ভ্যাকসিনের গুনগতমান অক্ষুন্ন রাখতে করণীয়

ভ্যাকসিনের গুনগতমান অক্ষুন্ন রাখতে করণীয়


১. তরল এবং হিমশুষ্ক উভয় প্রকার ভ্যাকসিন পরিবহন করতে বরফ/আইস ব্যাগসহ ফ্লাস্ক বা কুলবক্স ব্যবহার করুন। সঠিকভাবে ভ্যাকসিন সংরক্ষণ, পরিবহন এবং সময়মতো প্রয়োগ না করা ভ্যাকসিন অকার্যকর হওয়ার অন্যতম কারণ।


২. সরবরাহকৃত তরল ভ্যাকসিনসমূহ রেফ্রিজারেটরে ২০ - ৮°সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করুন। এই ভ্যাকসিন শুন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচের তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যাবে না। হিমশুষ্ক ভ্যাকসিনসমূহ শুন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচের তাপমাত্রায় বা বরফপাত্রে সংরক্ষণ করুন।


৩. হিমশুষ্ক ভ্যাকসিনসমূহে সরবারহকৃত ডাইল্যুয়েন্ট (ভ্যাকসিনের দ্রবণ) এবং যে সকল ভ্যাকসিনের সাথে ডাইল্যুয়েন্ট সরবরাহ করা হয় না সেগুলোর ক্ষেত্রে বাজারে প্রাপ্ত ডিস্টিল্ড ওয়াটার (পরিশুদ্ধ পানি) ব্যবহার করুন।


৪. হিমশুষ্ক ভ্যাকসিনসমূহ একবার ডাইল্যুয়েন্ট বা ডিস্টিল্ড ওয়াটারে মিশ্রিত করার পর ২ (দুই) ঘন্টার মধ্যে সম্পূর্ণ ভ্যাকসিন ব্যবহার শেষ করুন। ভায়ালে অব্যবহৃত ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করে পুনরায় ব্যবহার করা যাবে না।


৫. ভ্যাকসিন প্রয়োগের পূর্বে সিরিঞ্জ, সূচ ও আনুসঙ্গিক পাত্রসমূহ জীবানুমুক্ত করে নিন।


৬. ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর ভ্যাকসিনের অব্যবহৃত অংশ, ভায়াল, ক্যাপ, রাবার স্টপার, একবার ব্যবহার উপযোগী সূচ মাটির নিচে পুঁতে ফেলুন বা পুড়িয়ে ফেলুন।


৭. আপনার সুস্থ-সবল গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগিকে নিয়মিত ভ্যাকসিন প্রয়োগ করুন।


৮. ভ্যাকসিন প্রয়োগের এক থেকে দুই সপ্তাহ পূর্বে আপনার গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগিকে কৃমিনাশক ঔষধ সেবন করাবেন।

ডাকপ্লেগ ভ্যাকসিন (Duck Plague Vaccine)

 ডাকপ্লেগ ভ্যাকসিন (Duck Plague Vaccine)


ডাকপ্লেগ হাঁসের একটি ভাইরাসজনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এ রোগে আক্রান্ত হাঁসের ছানা ৩-৪ দিনের মধ্যে মারা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সবুজ বর্ণের পাতলা পায়খানা, কিছু ক্ষেত্রে পানির মত ডায়রিয়া, চোখে পিচুটি লেগে থাকা, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটা, প্যারালাইসিস এবং মৃত্যুর পর হাঁসের পুরুষাঙ্গ বাইরে বের হয়ে আসা এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এ রোগে আক্রান্ত হাঁসের মৃত্যুর হার প্রায় শতকরা নব্বই ভাগ।


ভ্যাকসিনের মাস্টার সীড: দেশীয় (Local) স্ট্রেইন।


অরিজিন: প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান, মহাখালী, ঢাকা।


ব্যবহারবিধি:


১. ছোট কাঁচের ভায়ালে ১০০ মাত্রা ভ্যাকসিন থাকে। ভ্যাকসিন ব্যবহারের জন্য পরিশ্রুত পানি, জীবাণুমুক্ত ও পরিষ্কার ঢাকনাযুক্ত পাত্র এবং সিরিঞ্জ- নিডিল প্রয়োজন হয়।


২. জীবানুমুক্ত পাত্রে ১০০ মিলি পরিশ্রুত পানি মেপে নিতে হয়। অতঃপর এই পানি থেকে কিছু পানি সিরিঞ্জের সাহায্যে ভায়ালে প্রবেশ করাতে হয়। ভায়ালের ভ্যাকসিন ভালভাবে গুলে গেলে এই মিশ্রণ পাত্রে রক্ষিত পরিশ্রুত পানির সঙ্গে ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হয়। মিশ্রিত ভ্যাকসিন হাঁসের বুকের মাংসে ১ মিলি করে দিতে হয়। ৩ সপ্তাহ বয়সের হাঁসের বাচ্চাকে প্রথম ভ্যাকসিন দিতে হয়। প্রথম ভ্যাকসিন দেয়ার ২১তম দিনে বুস্টার ডোজ দিতে হয়।


৩. ছয় মাস পর্যন্ত এই ভ্যাকসিনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় থাকে। তাই ৬ মাস পর পর এই ভ্যাকসিন দিতে হয়।


৪. খামারে রোগ দেখা দিলে সুস্থ হাঁস আলাদা করে এই ভ্যাকসিন দিতে হয়।


৫. ভ্যাকসিন মিশ্রিত করার ২ ঘন্টার মধ্যে ব্যবহার করতে হবে।


সরবরাহ: প্রতি ভায়ালে ১০০ মাত্রা ভ্যাকসিন।

গামবোরো ভ্যাকসিন (Infectious Bursal Disease- IBD Vaccine)

 গামবোরো ভ্যাকসিন (Infectious Bursal Disease- IBD Vaccine)


গামবোরো রোগ (Infectious Bursal Disease) মোরগ-মুরগির ভাইরাসজনিত একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। সাধারণতঃ ৩ থেকে ৮ সপ্তাহ বয়সী মোরগ-মুরগি এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ রোগে মোরগ-মুরগির বাচ্চা আক্রান্ত হয় বলে এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। আক্রান্ত মোরগ-মুরগির কোচকানো পালক, অবসন্নতা, ময়লাযুক্ত পায়ুস্থান, উচ্চ তাপমাত্রা, কাঁপুনি ও পানির মতো ডায়রিয়া এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য।


ভ্যাকসিনের মাস্টার সিড: বিএইউ ৪০৪ (BAU-404) স্ট্রেইন।


অরিজিন: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।


ব্যবহারবিধি:


১. ৫০ মিলি ডাইল্যুয়েন্টের সাথে মিশ্রণের পর ১ ফোঁটা চোখে প্রয়োগ করতে হয়।


২. সাধারণতঃ ১০ থেকে ২১ দিন বয়সে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হয়। (৭ দিন পর পুনরায় প্রয়োগ করতে হয়), তবে মাতৃ-এন্টিবডির টাইটারের উপর নির্ভর করে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা উত্তম।


সরবরাহ: প্রতি ভায়ালে ১০০০ মাত্রা ভ্যাকসিন এবং সাথে ৫০ মিলি ডাইল্যুয়েন্ট।


সেবা মূল্য: প্রতি ভায়াল ২৫০.০০ টাকা।

সালমোনেলোসিস/ফাউল টাইফয়েড ভ্যাকসিন (Salmonellosis/Fowl Typhoid Vaccine)

 সালমোনেলোসিস/ফাউল টাইফয়েড ভ্যাকসিন (Salmonellosis/Fowl Typhoid Vaccine)


সালমোনেলোসিস/ফাউল টাইফয়েড গৃহপালিত মোরগ-মুরগির একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ। এ রোগ তীব্র ও দীর্ঘমেয়াদী (Chronic) প্রকৃতির হয়ে থাকে। তীব্র প্রকৃতির রোগে মোরগ-মুরগির উচ্চ তাপমাত্রা ও হঠাৎ মৃত্যু হয়। দীর্ঘমেয়াদে (Chronic) মোরগ-মুরগির খাদ্য গ্রহণে অনিহা, ঝুঁটি বিবর্ণ হওয়াসহ সবুজ বা হলুদ বর্ণের ডায়রিয়া দেখা দেয় যা মলদ্বারের আশেপাশের পালকে লেগে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত পাখির ওজন ও ডিম উৎপাদন দ্রুত কমে যায়। আক্রান্ত মোরগ-মুরগির মল, দূষিত খাদ্য ও পানির মাধ্যমে সুস্থ পাখিতে রোগ সংক্রমিত হয়। বাহক মুরগির ডিমের মাধ্যমে বাচ্চাতে এ রোগের সংক্রমণ হয়।

ভ্যাকসিন সিড: সালমোনেলা গেলিনেরাম-এর ফিল্ড স্ট্রেইন LRI 49 (SG) ও 9R স্ট্রেইন।


অরিজিন: প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান, মহাখালী, ঢাকা।


ব্যবহারবিধি: ৬ সপ্তাহের উর্ধ্ব বয়সী মোরগ-মুরগিতে প্রখম ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। ১ম ডোজের ৩০ দিন পর বুস্টার ও পরে ৬ মাস অন্তর নিয়মিত ভ্যাকসিন দিতে হয়। গলার চামড়ার নিচে ০.৫ মিলি করে ইনজেকশন দিতে হয়।


সরবরাহ: প্রতি ভায়ালে ২০০ মাত্রা ভ্যাকসিন।


সেবা মূল্য: প্রতি ভায়াল ২৪০.০০ টাকা।

হাঁস-মুরগির কলেরা ভ্যাকসিন

 হাঁস-মুরগির কলেরা ভ্যাকসিন (Fowl Cholera Vaccine)


হাঁস-মুরগির কলেরা গৃহপালিত ও বন্য পাখির একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। পাস্তুরেলা মাল্টোসিডা টাইপ-এ (Pasteurella multocida type -A) নামক ব্যকটেরিয়া দ্বারা এ রোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে। এটি মূলত আক্রান্ত পাখি থেকে সুস্থ পাখিতে অথবা আক্রান্ত বা বাহক পাখির মল ও অন্যান্য নিঃসরণ দ্বারা পানি ও খাদ্য দূষণের মাধ্যমে অন্য সুস্থ পাখিতে ছড়ায়। উচ্চ আক্রান্তের হার ও অধিক মৃত্যু এবং সবুজ বা হলুদ ডায়রিয়া এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সব বয়সী পাখি এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে তবে বয়স্ক পাখি অধিক সংবেদনশীল।


ভ্যাকসিনের মাস্টার সিড: লোকাল স্ট্রেইন।


অরিজিন: প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান, মহাখালী, ঢাকা।


ব্যবহারবিধি: অয়েল এ্যাডজুভেন্ট ভ্যাকসিন ২ মাস বা তদুর্ধ্ব বয়সী হাঁস-মুরগিকে চামড়ার নীচে ১ মিলি করে প্রয়োগ করতে হয়। প্রথম ভ্যাকসিন প্রয়োগের ১৫ দিন পর বুস্টার ডোজ, এরপর ৬ মাস অন্তর অন্তর ভ্যাকসিন দিতে হয়। ভ্যাকসিনে অয়েল এ্যাডজুভেন্ট থাকে বিধায় তা মাংসপেশীতে প্রয়োগ করলে মাংস নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে হাঁস-মুরগি খোঁড়া হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও অল্প বয়স্ক হাঁস-মুরগিতে (২ মাস বয়সের নীচে) প্রয়োগ করলে অনেকক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই ভ্যাকসিন কোন অবস্থায়ই শূন্য ডিগ্রি (০০) সেলসিয়াস বা তার নীচের তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যাবে না।


সংরক্ষণ: ২°থেকে ৮° সেলসিয়াস।


সরবরাহ: প্রতি ভায়ালে ১০০ মাত্রা।


সেবা মূল্য: প্রতি ভায়াল ৫০.০০ টাকা।

পিজিয়ন পক্স ভ্যাকসিন (Pigeon Pox Vaccine)

 পিজিয়ন পক্স ভ্যাকসিন (Pigeon Pox Vaccine)


পিজিয়ন পক্স কবুতরের একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এ রোগের সুপ্তিকাল ৪ থেকে ২০ দিন। মাথা ও ঝুঁটিতে ফুসকুড়ি সৃষ্টি প্রধান লক্ষণ। অনেক সময় মুখগহ্বর, খাদ্যনালী, শ্বাসনালীতে ডিপথেরিক লিশন দেখা যায়। বাচ্চা কবুতরের ক্ষেত্রে খাবার খেতে না পারার জন্য মৃত্যু হার ৯০% থেকে ১০০% পর্যন্ত হতে পারে।


ভ্যাকসিনের মাস্টার সিড: পিজিয়ন পক্স ভাইরাস লোকাল স্ট্রেইন।


অরিজিন: প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান, মহাখালী, ঢাকা।


ব্যবহারবিধি: এই ভ্যাকসিন ৩ থেকে ৭ দিন বয়সী বাচ্চা মুরগি ও ৭ দিন বা তদুর্ধ্ব বয়সী কবুতরে প্রয়োগ করা হয়। এই ভ্যাকসিনের অন্যান্য ব্যবহার বিধি ফাউল পক্স ভ্যাকসিনের অনুরূপ।


সরবরাহ: প্রতি ভায়ালে ২০০ মাত্রা।


সেবা মূল্য: প্রতি ভায়াল ৪০.০০ টাকা।

ফাউল পক্স ভ্যাকসিন (Fowl Pox Vaccine)

 ফাউল পক্স ভ্যাকসিন (Fowl Pox Vaccine)


ফাউল পক্স মোরগ-মুরগির ভাইরাসজনিত একটি রোগ। আক্রান্ত মোরগ-মুরগির ঝুঁটি, কানের লতি, পা, পায়ের আঙ্গুল এবং পায়ুর চার পাশে বসন্তের মত ফুসকুড়ি দেখা দেয়। চোখের চারপাশে এই ক্ষত সৃষ্টির ফলে চোখ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এই রোগে বাচ্চা মোরগ-মুরগি বয়স্ক মোরগ-মুরগি অপেক্ষা বেশি সংবেদনশীল।


ভ্যাকসিনের মাস্টার সিড: বোডেট (Beaudette) স্ট্রেইন।


অরিজিন: মালয়েশিয়া।

ব্যবহারবিধি:


১. প্রথমে ভ্যাকসিনের ভায়ালে ৩ মিলি পরিশ্রুত পানি নিয়ে ভাল করে মিশাতে হবে। এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য বিশেষ ধরনের সুঁচ (Bifurcated Needle) বা বিকল্প হিসেবে ইনজেকশনের সুচের অর্ধাংশ ডুবিয়ে ৩০ দিন বা তদুর্ধ্ব বয়সী মোরগ-মুরগির পাখার ত্রিকোণাকৃতি পালক/লোমবিহীন স্থানের চামড়ায় একাধিকবার খুঁচিয়ে প্রয়োগ করতে হয়।


২. এই ভ্যাকসিন আজীবনের জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে। মাতৃ-এন্টিবডি বাচ্চায় সঞ্চারিত হয়।


৩. এই ভ্যাকসিন জীবনে একবার প্রয়োগই যথেষ্ট।


সরবরাহ: প্রতি ভায়ালে ২০০ মাত্রা


সেবা মূল্য: প্রতি ভায়াল ৫০.০০ টাকা।

মারেক্স ভ্যাকসিন (Marek's Vaccine)

 মারেক্স ভ্যাকসিন (Marek's Vaccine)


মারেক্স ডিজিজ (Marek's Disease) মোরগ-মুরগির একটি লিমফো প্রোলিফারেটিভ (Lympho-proliferative) রোগ। পেরিফেরাল স্নায়ু, যৌন গ্রন্থি, আইরিস, বিভিন্ন অঙ্গ, পেশী ও ত্বকে এককেন্দ্রীক কোষের অনুপ্রবেশ (Infiltration) এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য। পেরিফেরাল স্নায়ুতে এককেন্দ্রিক কোষের অনুপ্রবেশের কারণে স্নায়ু স্ফীত হয়ে পক্ষাঘাত সৃষ্টি করে। তাই এ রোগকে ফাউল প্যারালাইসিস বলা হয়।


ভ্যাকসিনের মাস্টার সিড: এইচভিটিএফসি-১২৬ (HVTFC-126) strain, সেরোটাইপ-৩।


অরিজিন: ইংল্যান্ড।


ব্যবহারবিধি: ২০০ মিলি ডাইল্যুয়েন্টের সাথে মিশ্রণের পর ০.২ মিলি করে মাথার ঠিক পিছনে ঘাড়ের চামড়ার নীচে প্রয়োগ করতে হবে। ১ (এক) দিন বয়সের মুরগির বাচ্চাকে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হয়।


সরবরাহ: প্রতি ভায়ালে ১০০০ মাত্রা ভ্যাকসিন এবং সাথে ২০০ মিলি ডাইল্যুয়েন্ট।


সেবা মূল্য: প্রতি ভায়াল ৪০০.০০ টাকা।

ছাগলের বসন্ত ভ্যাকসিন (Goat Pox Vaccine)

ছাগলের বসন্ত ভ্যাকসিন (Goat Pox Vaccine)


গোট পক্স একটি ভাইরাসজনিত রোগ। গোট পক্স মৃদু ও মারাত্মক প্রকৃতির হয়ে থাকে। আক্রান্ত ছাগলের লোমবিহীন ত্বকে বিশেষ করে ঠোঁট, নাক, লেজের নীচে এবং ওলানে গুটি দেখা দেয়। এ রোগে ছাগলের উচ্চ তাপমাত্রা (জ্বর), শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, লোমহীন ত্বকে প্রধানত নাকের বহির্ভাগে (মাজল), মুখগহ্বরে ও ওলানের আশেপাশে ক্ষত দেখা দেয়। এ রোগে ছাগলের চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। বাচ্চা ছাগলের মৃত্যুর হার অত্যধিক। সুপ্তিকাল ২ থেকে ১৪ দিন।


ভ্যাকসিনের মাস্টার সিড: লোকাল স্ট্রেইন।


অরিজিন: বিএলআরআই, সাভার, ঢাকা।


ব্যবহারবিধি: প্রতি ভায়ালে ভ্যাকসিন ১০০ মিলি ডাইল্যুয়েন্টের সাথে মিশ্রণের পর পশুকে ১ মিলি করে চামড়ার নীচে প্রয়োগ করতে হয়।


সরবরাহ: প্রতি ভায়ালে ১০০ মাত্রা ভ্যাকসিন এবং সাথে ১০০ এমএল ডাইল্যুয়েন্ট।


সেবা মূল্য: প্রতি ভায়াল ৭৫.০০ টাকা।

পিপিআর

 পিপিমার (Peste des Petits Ruminants/PPR Vaccine)


পিপিআর ছাগলের একটি মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ। রোগটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে এবং প্রাদুর্ভাব এলাকায় শতকরা প্রায় ১০০ ভাগ ছাগল এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগে ভেড়াও আক্রান্ত হয়, তবে ভেড়ার চেয়ে ছাগল বেশি সংবেদনশীল। আক্রান্ত ছাগলের মৃত্যুর হার শতকার ৫০ খেকে ৮০ ভাগ। বাংলাদেশে প্রায় সর্বত্রই এর প্রাদুর্ভাব দেখে যায়। সব বয়সের ছাগল আক্রান্ত হতে পারে, তবে এক বছর পর্যন্ত বয়সের ছাগলে মৃত্যুহার বেশি। উচ্চ তাপমাত্রা, পাতলা পায়খানা (ডায়রিয়া), পানিস্বল্পতা, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, মুখে ঘা এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য।

ভ্যাকসিনের মাস্টার সিড: লোকাল (শহীদ টিটো) স্ট্রেইন এবং নাইজেরিয়া ৭৫/১।


অরিজিন: বিএলআরআই, সাভার, ঢাকা এবং CIRAD।


ব্যবহারবিধি: প্রতি ভায়াল ভ্যাকসিনসরবরাহকৃত ১০০ এমএল ডাইল্যুয়েন্টের সাথে মিশ্রণের পর ছাগল/ভেড়াকে ১ এমএল করে ঘাডের চামড়ার নীচে প্রয়োগ করতে হয়। মিশ্রণের পূর্বে সরবরাহকৃত ডাইল্যুয়েন্ট ১০-১২ ঘন্টা ৪°থেকে ৮° সেলসিয়াসতাপমাত্রায় ঠান্ডা করে নিতে হবে। মায়ের ভ্যাকসিন দেওয়া থাকলে ৩ মাস বয়সের ছাগল/ভেড়াকে এ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। তবে মায়ের ভ্যাকসিন দেওয়া না থাকলে ২ মাস বয়সের ছাগল/ভেড়াকেও এ ভ্যাকসিন দেয়া যায়, সেক্ষেত্রে ৬ মাস বয়সে পুনরায় (বুস্টার) ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হয়। গর্ভাবস্থায় এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা যাবে, তবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে । এই ভ্যাকসিনের কার্যকাল কমপক্ষে ১ বছর। আক্রান্ত ছাগল/ভেড়াকে বা আক্রান্ত এলাকায় এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা যাবে না।


সরবরাহ: প্রতি ভায়ালে ১০০ মাত্রা ভ্যাকসিন এবং সাথে ১০০ এমএল ডাইল্যুয়েন্ট।


সেবা মূল্য: প্রতি ভায়াল ৭০.০০ টাকা।

🧪 জলাতঙ্ক ভ্যাকসিন (Rabies Vaccine)

জলাতঙ্ক বা র‍্যাবিস (Rabies) মানুষসহ সকল উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট স্তন্যপায়ী প্রাণীর স্নায়ুতন্ত্রের একটি মারাত্মক রোগ। এ রোগে আক্রান্ত প্রাণির গলবিলের পেশী অবশ হয়ে যাওয়ায় জল পান করতে না পারার ভীতি তৈরি হয় — তাই বাংলায় একে “জলাতঙ্ক” বলা হয়।

আক্রান্ত প্রাণীর আচরণে দেখা দেয়:

  • উন্মত্ততা ও হঠাৎ আক্রমণাত্মক স্বভাব
  • ফ্যারিঞ্জিয়াল প্যারালাইসিস
  • মুখ দিয়ে লালা ঝরার প্রবণতা
  • লক্ষণ প্রকাশ পেলে মৃত্যুর হার প্রায় ১০০%

🌐 সংক্রমণের উৎস:

আক্রান্ত কুকুর, বিড়াল, গবাদিপশু, শিয়াল, বানর, বেজি, বাদুড় ইত্যাদির কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটে। আক্রান্ত প্রাণীর লালার মাধ্যমেই ভাইরাস ছড়ায়।

✅ প্রতিরোধ ব্যবস্থা:

সময়ে মতো Rabies Vaccine প্রয়োগের মাধ্যমে এই রোগ শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য।

🧬 ভ্যাকসিন মাস্টার সিড:

  • স্ট্রেইন: Flury Strain
  • উৎস: Pasteur Institute, Paris (WHO)

🧪 ভ্যাকসিনের প্রকারভেদ ও ব্যবহারবিধি:

দুই ধরনের ভ্যাকসিন ব্যবহার হয়:

  1. HEP (High Embryo Passage): গবাদিপশু, বিড়াল, বানর, বেজী ইত্যাদির জন্য
  2. LEP (Low Embryo Passage): কেবল কুকুরের জন্য

মায়ের ভ্যাকসিন দেওয়া থাকলে বাচ্চার শরীরে ৬ মাস পর্যন্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে। না থাকলে:

  • ২ মাসে HEP
  • ৪ মাসে LEP

📋 প্রজাতি ও বয়স ভেদে ভ্যাকসিন প্রয়োগের ছক:

প্রাণীর নাম ভ্যাকসিনের নাম বয়স পরিমাণ প্রয়োগের স্থান পরবর্তী ডোজের সময়সূচি
কুকুর LEP ৩ মাসের ঊর্ধ্বে ৩.০ মি.লি মাংসপেশীতে ১ বছর অন্তর
কুকুরের বাচ্চা HEP ৩ মাসের নিচে ১.৫ মি.লি মাংসপেশীতে ১-২ মাস পর LEP দিতে হবে
বিড়াল/বেজি/বানর HEP ২ মাসের ঊর্ধ্বে ১.৫ মি.লি মাংসপেশীতে ১ বছর অন্তর
ছাগল/ভেড়া HEP ৩ মাসের ঊর্ধ্বে ১.৫ মি.লি মাংসপেশীতে ১ মাস পর বুস্টার ডোজ, ১ বছর অন্তর
গরু HEP পূর্ণবয়স্ক ৩.০ মি.লি মাংসপেশীতে ১ মাস পর বুস্টার ডোজ, ১ বছর অন্তর
বাছুর HEP ৩ মাসের পর ১.৫ মি.লি মাংসপেশীতে ১ মাস পর বুস্টার ডোজ, ১ বছর অন্তর

⚠️ বিশেষ নির্দেশনা:

  • ভ্যাকসিনের সাথে থাকা ডাইল্যুয়েন্ট মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হয়
  • ভায়াল বায়ুশূন্য থাকে, তাই সিরিঞ্জ দিয়ে কিছু বাতাস ঢুকালে সহজ হয়
  • শুধুমাত্র মাংসপেশীতে প্রয়োগযোগ্য; চামড়ার নিচে নয়

📦 সরবরাহ ও মূল্য:

  • প্রতি ভায়ালে: ১ মাত্রা ভ্যাকসিন + ৫ মি.লি ডাইল্যুয়েন্ট
  • সেবা মূল্য: ৫০.০০ টাকা

গলাফুলা ভ্যাকসিন (Haemorrhagic Septicaemia /HS Vaccine)

 গলাফুলা ভ্যাকসিন (Haemorrhagic Septicaemia /HS Vaccine)


গলাফুলা একটি তীব্র প্রকৃতির রোগ যা গরু এবং মহিষকে আক্রান্ত করে। এটি একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ যা Pasteurella multocida দিয়ে হয়। এ রোগে মৃত্যুর হার খুবই বেশি। বর্ষাকালে গলাফুলা রোগ বেশি দেখা যায়। পশুর শরীরে স্বাভাবিক অবস্থায় এ রোগের জীবাণু বিদ্যামান থাকে। কোন কারণে যদি পণ্ড পীড়ন (Stress) এর সম্মুখীন হয় যেমন- ঠান্ডা, অধিক গরম, ভ্রমণ জনিত দুর্বলতা, তখনই এ রোগ বেশি দেখা যায়। সেপ্টিসেমিয়া, উচ্চ তাপমাত্রা, গ্রীবার সম্মুখভাগে এডিমা (স্ফীতি) ও উচ্চ মৃত্যুও হার এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য।


ভ্যাকসিন মাস্টার সিড: Pasteurella multocida type – B লোকাল স্ট্রেইন।

অরিজিন: প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান, মহাখালী, ঢাকা।


ব্যবহারবিধি:


১. অয়েল এ্যাডজুভেন্ট ভ্যাকসিন সাধারণত: প্রাপ্তবয়স্ক (২ বৎসরের উপরে) গরু/মহিষকে ২ মিলি মাত্রায় এবং ছাগল, ভেড়ায় ১ মিলি মাত্রায় প্রয়োেগ করতে হয়। এনজুটিক (রোগ হবার ইতিহাস রয়েছে এমন) এলাকায় ৬ মাস বা তদূর্ধ্ব বয়সী বাছুরে প্রাপ্তবয়স্ক গরুর অর্ধেক মাত্রায় ভ্যাকসিন দিতে হয়।

২. ভ্যাকসিন প্রয়োগের ২-৩ সপ্তাহ পর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মাতে শুরু করে। রোগ প্রতিরোেধ ক্ষমতা ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর ৬ (ছয়) মাস পর্যন্ত বজায় থাকে। এই ভ্যাকসিন মৃত জীবাণু দ্বারা প্রস্তুত বিধায় এই ভ্যাকসিনের মাধ্যমে রোগ বিস্তারের কোন সম্ভাবনা নেই। 

৩. ভ্যাকসিন প্রয়োগের স্থান ২-৩ দিন পর্যন্ত ফুলে থাকতে পারে। ত্রুটিপূর্ণ ইনজেকশনের কারণে এই ফলা বেশ কিছু দিন থাকতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে (শতকরা ১ভাগ পশুতে) এনাফাইলেকটিক (Anaphylactic) শক দেখা দিতে পারে। কোন এলাকায় বা খামারে ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর্বে কিছু সংখ্যক গবাদিপশুকে ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর ২৫-৩০ মিনিট অপেক্ষা করে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায় কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা শ্রেয়। যদি কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, তাহলে এন্টিএলার্জিক ব্যবহারে সুফল পাওয়া যায়।

৪. অয়েল এ্যাডজুভেন্ট ভ্যাকসিন বেশ ঘন হওয়ায় এই ভ্যাকসিন প্রদানে মোটা বোরের নিডিল ব্যবহার সুবিধাজনক।


সরবরাহ: প্রতি ভায়ালে গরু/মহিষের জন্য ৫০ মাত্রা ভ্যাকসিন এবং ছাগল/ভেড়া/বাছুরের জন্য ১০০ মাত্রার ভ্যাকসিন।


সেবা মূল্য: প্রতি ভায়াল ৫০.০০ টাকা।



বাদলা ভ্যাকসিন (Black Quarter/BQ Vaccine)

 বাদলা ভ্যাকসিন (Black Quarter/BQ Vaccine)


বাদলা একটি তীব্র প্রকৃতির মারাত্মক সংক্রামক রোগ। কম বয়সে অর্থাৎ ৬ মাস থেকে ৩ বছর বয়সের স্বাস্থ্যবান গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়াতে এ রোগ বেশি দেখা যায়। Clostridium Chauvoei নামক ব্যকটেরিয়া দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। আমাদের দেশে বর্ষা মৌসুমে এ রোগ বেশি দেখা যায় বলে একে বাদলা রোগ বলে। এ রোগে মৃত্যুর হার খুবই বেশি। পশুর জ্বর হয় এবং উরু, ঘাড়, কাঁধ ও কোমরের আক্রান্ত স্থান ফুলে ওঠে। এ সব স্থানে চাপ দিলে পচ পচ্ (cripitating sound) শব্দ হয়। আক্রান্ত স্থানে আস্তে আস্তে পচন ধরে।


ভ্যাকসিন মাস্টার সিড: লোকাল স্ট্রেইন।

অরিজিন: প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান, মহাখালী, ঢাকা।


ব্যবহারবিধি:


১. গরু ও মহিষের ৫মিলি মাত্রায় এবং ছাগল ও ভেড়ায় ২মিলি মাত্রায় গলা বা ঘাড়ের ঢিলা চামড়ার নিচে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হয়। ৬ মাস থেকে ৩ বছর বয়সী পশুকে বাদলা ভ্যাকসিন দেয়া হয়। ভ্যাকসিন প্রদানের আগে বোতল ভালভাবে ঝাঁকিয়ে নিতে হয়।


২. ভ্যাকসিন প্রদানের ২ থেকে ৩ সপ্তাহের ভিতর পূর্ণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ৬ মাস পর্যন্ত বজায় থাকে তাই ৬ মাস অন্তর অন্তর এ ভ্যাকসিন দিতে হয়। ১ম মাত্রা প্রয়োগের ৪ সপ্তাহ পর ২য় মাত্রা ভ্যাকসিন দিলে দীর্ঘ মেয়াদে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মায়। সেক্ষেত্রে ১ বৎসর অন্তর অন্তর ভ্যাকসিন দিতে হয়।


সরবরাহ: প্রতি ভায়ালে গরু/মহিষের জন্য ২০ মাত্রা ভ্যাকসিন এবং ছাগল/ভেড়ার জন্য ৫০ মাত্রার ভ্যাকসিন।

সেবা মূল্য: প্রতি ভায়াল ৪০.০০ টাকা।

তড়কা ভ্যাকসিন (Anthrax Vaccine)

 তড়কা Bacillusanthracis নামক ব্যাকটেরিয়াজনিত অতি তীব্র ও মারাত্মক ধরনের রোগ। এটি একটি জুনোটিক রোগ। সাধারনত ঘাস বা খড়ের সাথে এ রোগের জীবাণু দেহে প্রবেশ করে। এ রোগের জীবাণু মাটিতে বহু বছর বেঁচে থাকতে পারে। বিশ্বের সকল দেশের গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীরও এ রোগ হতে দেখা যায়। সাধারণত বর্ষাকালের প্রথমদিকে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। আক্রান্ত পশুর আকস্মিক মৃত্যু, উচ্চ তাপমাত্রায় (১০৪০ থেকে ১০৮°ফা.) মৃত্যুর পর নাক-মুখ ও পায়ুপথ দিয়ে কালচে রং-এর রক্ত বের হয়ে আসা এ রোগের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ।


ভ্যাকসিনমাস্টার সিড: F2-34 Sterne Strain

অরিজিন: অস্ট্রেলিয়া


ব্যবহারবিধি:


১. গরু, মহিষ ও ঘোড়ায় ১ মিলি মাত্রায় এবং ছাগল/ভেড়ায় ০.৫ মিলি মাত্রায় ঘাড়ের চামড়ার নীচে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হয়। ছয় মাস বা তদুর্ধ্ব বয়সের গরু মহিষে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়।

২. যে সমস্ত এলাকায় Anthrax রোগ হওয়ার ইতিহাস রয়েছে অর্থাৎ Enzootic area-তে নিয়মিতভাবে বছরে ১ বার এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হয়।

৩. সাধারণত এ ভ্যাকসিন প্রয়োগের ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যেই পশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়।

৪. ভ্যাকসিন দেওয়া হলে ভ্যাকসিন প্রদানের স্থান ফুলে যেতে পারে এবং জ্বালা-পোড়া হতে পারে।

৫. ছয় মাসের ঊর্ধ্বে গর্ভবতী গাভীকে ভ্যাকসিন প্রয়োগে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভবনা থাকে বিধায় উক্ত সময়ে ভ্যাকসিন প্রদান না করাই উত্তম।

৬. দুগ্ধবতী গাভীকে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে দু'এক দিনের জন্য দুধের উৎপাদন কিছুটা কমে যায়। অবশ্য পরে আস্তে আস্তে উৎপাদন স্বাভাবিক হয়ে আসে।

৭. আংশিক বা সম্পূর্ণ ব্যবহৃত ভ্যাকসিন এবং ভ্যাকসিন ভায়াল যথাযথভাবে নষ্ট করে ফেলতে হবে।


সতর্কতা:

এ রোগের প্রাদুর্ভাব এলাকায় ছাগল/ভেড়ায় ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাগলে এই ভ্যাকসিন দেওয়ার পরই বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় লাফালাফি শুরু করে। তাই ছাগল-ভেড়ায় খুব সাবধানে এই ভ্যাকসিন ব্যবহার করতে হয়।


সরবরাহ: প্রতি ভায়ালে গরু, মহিষ, ঘোড়ার জন্য ১০০ মাত্রা ভ্যাকসিন এবং ছাগল/ভেড়ার জন্য ২০০ মাত্রার ভ্যাকসিন।

সেবা মূল্য: প্রতি ভায়াল ৮০.০০ টাকা।

ক্ষুরা রোগের ভ্যাকসিন (Foot and Mouth Disease Vaccine)

 ক্ষুরা রোগের ভ্যাকসিন (Foot and Mouth Disease Vaccine)

ক্ষুরা রোগ একটি ভাইরাসজনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এ রোগকে অঞ্চলভেদে ক্ষুরাচল, চপচপিয়া বা বাতনাও বলে থাকে। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি দ্বিক্ষুরবিশিষ্ট প্রাণী এ রোগে আক্রান্ত হয়। জ্বর, মুখে ও পায়ে ফোসকাসহ যা এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এ রোগে আক্রান্ত বয়স্ক পশুতে মৃত্যুর হার কম হলেও আক্রান্ত বাছুরের মৃত্যু হার অনেক বেশী। নিয়মিত ভ্যাকসিন প্রদান করে রোগটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।


টাইভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন: এই ভ্যাকসিনেA, O এবং Asia-1 সেরোটাইপ একত্রে থাকে।

আকসিন মাস্টার সিড: লোকাল স্ট্রেইন।

অরিজিন: প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান, মহাখালী, ঢাকা এবং বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সাভার, ঢাকা।


ব্যবহারবিধি:


১. গরু/মহিষে ৬ মিলি মাত্রায়, বাছুরে ৩ মিলি মাত্রায় এবং ছাগল/ভেড়ায় ২মিলি মাত্রায় ঘাড়ের চামড়ার নীচে এ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হয়।

২. মায়ের ভ্যাকসিন দেয়া না থাকলে ১ (এক) মাস বয়সের এবং মায়ের ভ্যাকসিন দেয়া থাকলে ৪ (চার) মাস বয়সের বাছুরে এই ভ্যাকসিনের ১ম ডোজ প্রয়োগ করতে হয়।

৩. ভ্যাকসিন প্রদানের ২১ দিন পর বুস্টার ডোজ প্রয়োগ করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

৪. এই ভ্যাকসিন সুস্থ পশুতে ৬ (ছয়) মাস পর পর প্রয়োগ করতে হয়।


সতর্কতা


১. এ ভ্যাকসিন ২০ থেকে ৮০ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। কোন অবস্থাতেই শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নীচের তাপমাত্রায় অথবা সাধারন তাপমাত্রায় (রুম টেম্পারেচারে) সংরক্ষণ করা যাবে না।

২. গর্ভবতী গাভীকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা যাবে। গর্ভবতী গাভীকে ভ্যাকসিন দেয়া থাকলে নবজাতকের এই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে যা (চার) মাস বয়স পর্যন্ত বজায় থাকে, ফলে বাছুরের মৃত্যুহার অনেক কমে যায়।

৩. এ ভ্যাকসিনসরবরাহ ও প্রয়োগের সময় অবশ্যই কুলবক্স বা বরফসহ ফ্লাক্স ব্যবহার করতে হবে।


সরবরাহ:

ট্রাইভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন: প্রতি ভায়ালে গরু/মহিষের জন্য ১৬ মাত্রা এবং ছাগল/ভেড়ার জন্য ৪৮ মাত্রা ভ্যাকসিন।

সেবা মূল্য: ৪০০.০০ টাকা।

মুরগির রাণীক্ষেত টিকা

 মুরগির রাণীক্ষেত টিকা

Ranikhet Disease Vaccine (RDV)


টিকার মাস্টার সীড: মেসোজেনিক মুক্তেসর এম (M) স্ট্রেইন।

অরিজিন: খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO)


ব্যবহার বিধি:

 (১) প্রতি ভায়ালে ০.৩ এমএল মূল টিকা হিমশুষ্ক অবস্থায় থাকে। প্রতি ভয়ালে ১০০ মাত্রা টিকা থাকে। এই টিকার রং সাদা।

(২) টিকার মিশ্রণ তৈরির জন্য জীবাণুমক্ত ও পরিষ্কার ঢাকনাযুক্ত পাত্র, সিরিঞ্জ, নিডিল ও পরিশ্রুত পানি প্রয়োজন। পানির তাপমাত্রা ২০ থেকে ৮০ সেলসিয়াস হওয়া বাঞ্ছনীয়। প্রথমে পাত্রে ১০০ এমএল পরিশ্রুত পানি মেপে নিতে হবে। তারপর সিরিঞ্জের সাহায্যে ১০০ এমএল থেকে কিছু পরিশ্রুত পানি ভায়ালে ঢুকিয়ে নিতে হবে। টিকা পুরোপুরি গুলানোর জন্য ভায়ালটি আস্তে আস্তে নাড়তে হবে। টিকা পুরোপুরি গুলে গেলে উক্ত মিশ্রণ পাত্রের অবশিষ্ট পরিশ্রুত পানির সঙ্গে উত্তমরুপে মিশিয়ে নিতে হবে। পাত্র থেকে টিকার মিশ্রণটি সিরিঞ্জে ভরে নিতে হবে। টিকা প্রয়োগের জন্য পাখির পায়ের মাংসল জায়গা থেকে পালকগুলি সরিয়ে ১ এমএল টিকা মাংসে প্রয়োগ করতে হবে।

(৩) ২ মাস বা ততোধিক বয়স্ক মুরগিকে এই টিকা দিতে হবে। এই টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতা ৬ মাস স্থায়ী হয়। তাই ৬ মাস অন্তর অন্তর এই টিকা প্রয়োগ করতে হয়।


(৪) টিকা দেয়ার সময় যদি কোন মোরগ-মুরগি ককসিডিওসিস, এসপারজিলোসিস, গামবোরো, কৃমি বা অপুষ্টি জনিত রোগে আক্রান্ত থাকে তাহলে রোগ থেকে আরোগ্য লাভের পর পুনরায় রাণীক্ষেত রোগের টিকা প্রদান করতে হয়। কারণ উপরোক্ত রোগ সমূহে আক্রান্ত হওয়ার ফলে মোরগ-মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।


(৫) সুস্থ মোরগ-মুরগিকেই এই টিকা দিতে হবে। খামারে রাণীক্ষেত রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত মোরগ-মুরগিকে টিকা দেওয়া যাবে না তখন আক্রান্ত মোরগ-মুরগি আলাদা করে ফেলতে হবে। যে সমস্ত মোরগ- মুরগির রাণীক্ষেত রোগ দেখা দেয়নি সেগুলিকে নিয়ম মাফিক টিকা দিতে হবে। অসুস্থ মুরগির সংস্পর্শে আসা সুস্থ মুরগির দেহে জীবাণু লুকিয়ে থাকার ফলে টিকা দেয়ার পরও এরা আক্রান্ত হতে পারে। তবে যে সব মোরগ- মুরগির দেহে জীবাণু নেই তাদের ক্ষেত্রে টিকা প্রদানের ফলে প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মে।


সরবরাহ: প্রতি ভায়ালে ১০০ মাত্রা।

মুল্য: প্রতি ভায়াল ১৫.০০ টাকা মাত্র।

বাচ্চা মুরগির রাণীক্ষেত টিকা

 বাচ্চা মুরগির রাণীক্ষেত টিকা

Baby Chick Ranikhet Disease Vaccine (BCRDV)


মোরগ মুরগির সংক্রামক রোগগুলোর মধ্যে রাণীক্ষেত রোগ বা নিউক্যাসেল ডিজিজ (New Castle Disease) ভাইরাস জনিত একটি মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি। এ রোগের জীবাণু আক্রান্ত বাচ্চা মোরগ-মুরগির শ্বাসতন্ত্র, পরিপাকতন্ত্র ও স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত করে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ প্রকাশ করে। পরিপাকতন্ত্র আক্রান্তের ফলে মোরগ-মুরগি সাদা চুনের ন্যায় অথবা সবুজ বর্ণের পাতলা মল ত্যাগ করে। এ রোগের সুপ্তিকাল ৩ থেকে ৬ দিন।


টিকার মাস্টার সীড: লেন্টোজেনিক এফ (F) স্ট্রেইন।

অরিজিন: খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO)

উৎপাদক : প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান , এল আর আই , মহাখালী , ঢাকা


ব্যবহার বিধি:

প্রতি ভায়ালে ০.৫ এমএল টিকা হিমশুষ্ক অবস্থায় থাকে। এ টিকা প্রদানের জন্য ৬ এমএল পরিশ্রুত পানি, জীবাণুমুক্ত পরিষ্কার মিশ্রণ, সিরিঞ্জ নিডিল ও আইড্রপার প্রয়োজন হয়। পানির তাপমাত্রা ২০ থেকে ৮০ সেলসিয়াস হওয়া বাঞ্ছনীয়। সিরিঞ্জের সাহায্যে ৬ এমএল পরিশ্রুত পানির কিছুটা অংশ নিয়ে টিকা ভায়ালে প্রবেশ করাতে হবে। টিকা গুলানোর জন্য ভায়ালে ধীরে ধীরে নাড়তে হবে এবং পুরো মিশ্রণটি সিরিঞ্জে টেনে নিতে হবে অতপর তা অবশিষ্ট পরিশ্রুত পানি সহিত মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত আই ড্রপারের সাহায্যে মিশ্রিত টিকা নিয়ে মুরগির বাচ্চার চোখে দিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে, বাচ্চা ঢোক গিললে বুঝা যাবে টিকা প্রয়োগ সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যেকোন চোখে ১ (এক) ফোটা করে টিকা দিতে হবে। এই টিকার রং সবুজ। সাধারণত: ৪ হতে ৭ দিন বয়সের মুরগির বাঁচ্চার চোখে প্রথম এ টিকা প্রয়োগ করা উত্তম। কারণ, এ ক্ষেত্রে মাতৃ-এন্টিবডি মাতৃ-এন্টিবডি দ্বারা টিকার ভাইরাস নিউট্রালাইজ (নিষ্ক্রিয়) হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। প্রথম টিকা প্রয়োগের ১৪ দিন পর অর্থাৎ ১৮ থেকে ২১ দিন বয়সে এই টিকা একইভাবে পুনরায় প্রয়োগ করতে হয়। এই টিকার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ স্থায়ী হয়। এ সময়ের পরে বড় মুরগির রাণীক্ষেত টিকা প্রয়োগ করতে হয়।


সরবরাহ: প্রতি ভায়ালে ১০০ মাত্রা।


মুল্য: প্রতি ভায়ালে ১৫.০০ টাকা মাত্র।

ভ্যাকসিনের গুনগতমান অক্ষুন্ন রাখতে করণীয়

ভ্যাকসিনের গুনগতমান অক্ষুন্ন রাখতে করণীয় ১. তরল এবং হিমশুষ্ক উভয় প্রকার ভ্যাকসিন পরিবহন করতে বরফ/আইস ব্যাগসহ ফ্লাস্ক বা কুলবক্স ব্যবহার কর...

জনপ্রিয় পোস্ট